 |
ছবিটি বিল কেদারিয়ার উত্তর পাশ থেকে তোলা। |
এবারের বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ভরে যায় ভবদহ এলাকার বিলগুলো। বিল উপচে পানি প্রবেশ করে গ্রামগুলোতে। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার চার মাস পার হলেও বিলগুলো এখনো ভরে আছে পানিতে। ফলে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন আর একটি পৌরসভায় থাকা আটটি বিলে এবার হচ্ছে না বোরো আবাদ। এতে উপজেলার বিল এলাকার কৃষকেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর এলাকার কোনো বিলে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু না থাকায় পলি পড়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর বুক উঁচু হয়ে গেছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় গত আগস্ট মাসের ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখের হালকা-মাঝারি বৃষ্টি ও সেপ্টেম্বর মাসে লঘুচাপে ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ তারিখে একাধারে বৃষ্টি এবং ঐ মাসের ২৫ ও ২৬ তারিখের মাঝারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় অভয়নগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার (আংশিক) ৭০টি গ্রামের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট ও ধর্মীয় উপাসনালয়।
তলিয়ে যায় কয়েক হাজার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। জলাবদ্ধতার চার মাস পার হলেও মাত্র দুই ফুট পানি কমেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভয়নগরের কেদারিয়া, গান্ধিমারী, বোকড়, ঝিকড়া, কাছুরাবাদ, ছোন্দা, ডুমুর এবং ধলিরবিল পানিতে টইটম্বুর। বিলে এখনো চার থেকে ছয় ফুট পানি।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, সাধারণত ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে বোরো ধানের চারা রোপণ প্রক্রিয়া। উপজেলায় গত ২০২২-২৩ বোরো মৌসুমে ১৪ হাজার ৩০ হেক্টরে আবাদ হয়েছিল। গত ২০২৩-২৪ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার হেক্টর। আর আবাদ হয়েছিল ১৪ হাজার ২৫০ হেক্টরে। জলাবদ্ধতার ঐ বছর ২৯০ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়নি। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১১০ হেক্টর। সূত্রমতে এবার জলাবদ্ধতার কারণে অভয়নগরে প্রায় ২ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ হবে না।
ধোপাদী গ্রামের কৃষক ওয়ালিউজ্জামান লিটু বলেন, 'কাছুরাবাদ বিলে আমাদের ১৫ বিঘে (৪২ শতকে বিঘা) জমি আছে। বন্যায় আমন গেছে এবার ইরি (বোরো) ধান হবে নানে। খুব যন্ত্রণায় আছি। ছেলেপুলে নিয়ে না খেয়ে মরতি হবেনে।'
সুন্দলী এলাকার কৃষক কানু বিশ্বাস বলেন, 'বিল বোকড়ের উত্তর কোনায় আমার আড়াই বিঘে (৫২ শতকে বিঘা) জমি রইছে। সেহানে এখনো পাঁচ ফুট জল। ধান রুতি পারছি না। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।'
বিলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালীর সাত বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) রয়েছে। ঐ জমিতে ছিটেফোঁটা ধান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, 'অভয়নগরের অন্তত আটটি বিলে এখনো চার থেকে ছয় ফুট জল। প্রতিটা বিলের আয়তন হাজার হেক্টরের উপরে। সেচ দিয়ে বিলের উপরের অংশের দু-এক জাগায় হয়তো ফসল হতে পারে। তবে অধিকাংশ বিলে এবার ফসল হবে না। অনাবাদি থাকবে অন্তত ৬ হাজার হেক্টর।'
জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ লাভলী খাতুন বলেন, আপনারা তো জানেন, এবারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কথা। উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১১০ হেক্টর। বিলগুলো এখনো পানিতে ভরে আছে। অনেক বিলে সেচ দিয়ে পানি অপসারণ করে বোরো আবাদের চেষ্টা চলছে। জানুয়ারি মাস ধরে বোরোর চারা রোপণ চলবে। তারপরও প্রায় ২ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না।
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক